উৎকণ্ঠায় স্বজনদের দিনযাপন
১০ দিনেও ফেরেননি সেই ৭৮ বাংলাদেশি নাবিক-জেলে
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৮-১২-২০২৪ ০২:২৮:০৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৮-১২-২০২৪ ০২:২৮:০৭ অপরাহ্ন
দশ দিনেও ফেরেননি সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক দুই ফিশিং জাহাজের ৭৮ জন বাংলাদেশি জেলে-নাবিক। কবে তারা ফিরবেন তা-ও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, আটক জেলেদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন স্বজনরা। প্রতিদিনই স্বজনরা আটক জেলে-নাবিকদের খবর জানতে ধরনা দিচ্ছেন ফিশিং জাহাজ মালিকদের অফিসে। দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে তাদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে জাহাজ মালিকরা জানিয়েছেন, ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক দুই জাহাজের ৭৮ জেলে-নাবিক সুস্থ আছেন। খাবারের কোনও সমস্যা নেই। তাদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হচ্ছে। দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।
মো. আমির হোসেন নামে এক স্বজন বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে বলেন, ‘এফ ভি মেঘনা-৫ জাহাজে আমার ছেলে মো. রিয়াজ (২৬) রয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। এরপর থেকে তার কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় আছে, কেমন আছে তা-ও বুঝতে পারছি না। ঘরে তার স্ত্রী আমেনা খাতুন ও ১৪ মাস বয়সী মেয়ে রায়সা আক্তার রয়েছে। ছেলের ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় তার মা সাফিয়া খাতুনও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।’
গত ৯ ডিসেম্বর দুপুরে সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট এলাকায় মাছ ধরার সময় দুটি ফিশিং ট্রলার ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। জাহাজ দুটির মধ্যে একটি ‘এফ ভি লায়লা-২’। এই ফিশিং জাহাজটির অপারেশন কোম্পানির নাম ‘এস আর ফিশিং’। অপর ফিশিং জাহাজ ‘এফ ভি মেঘনা-৫’-এর অপারেশন কোম্পানির নাম সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড। লায়লা-২ জাহাজটিতে নাবিকসহ ৪১ জন এবং মেঘনা-৫ এ ৩৭ জন জেলে ছিলেন। ভারতের ওড়িশা রাজ্যের জগৎসিংহপুর জেলার অন্তর্গত এই প্যারাদ্বীপ বন্দরে আটক জাহাজ দুটি নোঙর করে রাখা হয়েছে।
এস আর শিপিং-এর সিএফও মিন্টু সাহা বলেন, ‘ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক নাবিক-জেলেসহ দুই জাহাজ ছাড়াতে আমাদের সমিতির নেতৃবৃন্দসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে আমরা ধরনা দিয়েছি। যেহেতু অন্য একটি দেশ জাহাজগুলো নিয়ে গেছে সেহেতু বিষয়টি এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় হয়ে গেছে। তারা জানিয়েছেন, আটক জেলে-নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আরও ১৫-২০ দিন লাগবে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষের দিকে তাদের ফিরিয়ে আনা হতে পারে। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। তবে আটক জাহাজের নাবিক-জেলেরা ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিন কথা হচ্ছে। খাবারের কোনও সমস্যা নেই। লায়লা-২ জাহাজের সবজি শেষ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ভারতের কোস্টগার্ড সবজি এনে দিয়েছে। বাকি খাবার এখনও জাহাজে মজুত আছে। সেগুলো দিয়ে আরও কয়েকদিন চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লায়লা-২ জাহাজটি গত ২৭ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ২০ ডিসেম্বর সাগর থেকে মাছ ধরা শেষে ফিরে আসার কথা ছিল। এর মধ্যে ৯ ডিসেম্বর জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের খুলনা সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে মাছ ধরার সময় ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ জাহাজে ৪১ জন নাবিক-জেলে রয়েছেন।’
মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। কখন নাবিক-জেলেরা দেশে ফিরবেন তা বুঝতে পারছি না। তবে নাবিক-জেলেরা ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনই কথা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন সুস্থ আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এফ ভি মেঘনা-৫ ফিশিং জাহাজে গত ২৪ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। এরই মধ্যে ৯ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা কিংবা ১২টা নাগাদ জাহাজটিকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। জাহাজ দুটি ভারতের ওড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ নামক এলাকায় নোঙর করেছে বলে জানতে পেরেছি।’
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে ভারতের পক্ষ থেকেও। ভারতীয় কোস্টগার্ডের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে জাহাজ দুটির ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার জন্য জাহাজ দুটিকে প্যারাদ্বীপে নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক মৎস্য দফতরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের খুলনা সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরার সময় ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ধরে নিয়ে যাওয়া দুই জাহাজসহ ৭৮ নাবিক-জেলেদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাছ ধরার জাহাজসহ নাবিক-জেলেদের নিরাপদে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কবে আনা যাবে তা নির্দিষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স